সরিষাবাড়ীতে ভূমি কর্মকর্তার সাহসী উদ্যোগে উদ্ধার হলো ২০ কোটি টাকার সরকারি ভূমি
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি: সরকারি সম্পদ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় , এ বার্তা স্পষ্ট করে দিলেন সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জুয়েল হক আকন্দ। তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে দখলে থাকা সরকারি ভূমি উদ্ধারে পরিচালিত অভিযানে ২০ কোটি টাকা মুল্যো সরকারি ভূমি উদ্ধার হওয়ায় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে আলোচনার ঝড়।
সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের প্রভাবশালী মরহুম তছের উদ্দিন সরকার এর দখলে থাকা শিমলা গোপীনাথ মৌজার ৩৯৬ ও ৩৯৭ নং দাগের মধ্যে ১ একর .২১ শতাংশ সরকারি রেলওয়ের ভূমি। সেখানে পুকুর ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করে বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন এবং একটি আবাসন প্রকল্পের মতো প্লট আকারে বিক্রির পায়তারায় লিপ্ত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় জমিটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। অভিযোগ উঠলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে বেড়েই চলছিল দখলদারিত্ব।
এ অবস্থায় কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জুয়েল হক আকন্দ নিজ উদ্যোগে তদন্ত শুরু করেন। তিনি ভূমির কাগজপত্র ও মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টির সত্যতা পান। এরপরই জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম , উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার, এদের সহায়তায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন তার অধীনস্থ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জুয়েল হক আকন্দের দেয়া প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ৩টি খারিজ বিগত ২০২৪ ইং সালের ২৫ শে এপ্রিল তারিখের খারিজ বাতিল করেন।
উক্ত খারিজ বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সূমী আক্তার এর নিকট আপীলের জন্য সরিষাবাড়ী পৌর সভার শিমলা বাজার এলাকার বাসিন্দা ভূমিদশ্যু মৃত তছের উদ্দিন সরকার এর ছেলে সুলতান আহম্মেদ, ইকবাল আহম্মেদ রিয়াদ ও তার ৪ মেয়ে আবেদন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সূমী আক্তার দীর্ঘ শুনানী শেষে গত ৭ এপ্রিল তারিখে তাদের আপীল আবেদন নামঞ্জুর করে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে রায় প্রদান করেন। এ বাতিলের আপীল নামঞ্জুর করায় এটি কে ঐতিহাসিক রায় বলে অভিহিত করেছেন সচেতন মহল। এর ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০ কোটি টাকার সরকারী রেলওয়ের ভূমি উদ্ধার হলো।
উক্ত ৩টি খারিজ তৎকালনি কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গোলজার হোসেন ও ইউনিয়ন ভূমি উপ- সহকারী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে সুলতান আহম্মেদ পরিবার বর্গকে খারিজ ৩টি প্রদান করেন। তাই অবৈকধভাবে ৩টি খারিজ প্রদানকারীগনের বিরুদ্ধে সচেতন সরকারী ভূমি তসরুপ করার অভিযোগ এনে জেলা প্রসাশকের নিকট শাস্তী সহ আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জুয়েল হক আকন্দ বলেন, “সরকারি জমি রক্ষা করা আমাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব। যারা দখল করেছিল , তাদের নিকট থেকে উদ্ধার করে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট ফেরত দেওয়া হলো। তিনি আরও জানান, কোথাও অনিয়ম দেখলে দ্রুত সময়ে আমাদের জানাতে সকলের নিকট অনুরোধ করেন।
এদিকে, সরকারি জমি উদ্ধারে ভূমি কর্মকর্তার সাহসী ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা বলেন, “এ ধরনের কর্মকর্তা থাকলে আর কেউ সরকারি সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।”
উদ্ধার করা জমি জনস্বার্থে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ইতোমধ্যে জমিটি জামালপুর-সরিষাবাড়ী -টু -ঢাকা ২টি রেল লাইনের প্রশস্তকরন কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ ভূমি উদ্ধার না হলে ভবিষ্যতে বেল লাইনের সম্প্রসারণ কাজ সরকারের জনস্বার্থে উদ্যোগের পরিকল্পনা বাধাগ্রস্থ’ হতো বলে সচেতনমহল মন্তব্য করেন। এ ছাড়াও সরকারি সম্পদের সুরক্ষা এবং সেবার মানোন্নয়নে এমন উদ্যোগ যেন আরও ছড়িয়ে পড়ে এটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।